পলাশ গাছের উপকারিতা ও নানা রকম ব্যবহার পরিচিতি পলাশ মাঝারি আকারের পত্রঝরা বৃক্ষ। সাধারণত ৮-১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। গাছের গোড়ার বাকল ফাটা হ...
পলাশ গাছের উপকারিতা ও নানা রকম ব্যবহার
পরিচিতি
পলাশ মাঝারি আকারের পত্রঝরা বৃক্ষ। সাধারণত ৮-১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। গাছের গোড়ার বাকল ফাটা হলেও আঁকাবাঁকা শাখা-প্রশাখার বাকল মসৃণ। একটি বোঁটায় তিনটি পাতা থাকে এবং আকারে অবিকল পারিজাত বা মাদার পাতার বড় সংস্করণ। পলাশের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল যে ফাল্গুনে গাছের পাতা ঝরে যায় আর তখনিই গাছে কুঁড়ি আসে। চৈত্রে যখন সারা গাছে কমলা বা লাল রঙের ফুল ফোটে তখন সেই অগ্নিকান্তি রুপ দেখে মনে হয় যেন আগুন রেগেছে। ফুলের কুঁড়ি দেখতে অনেকটা বাগের নখের মতো এবং ফুলের গঠন অনেকটা বক ফুলের মতো। এ ফুলের বৃতি ভেলভেটের মতো লোমশ এবং নরম। পলাশ ফল ছোট শিমের মতো, ২-৪ সে. মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। পলাশ আমাদের দেশজ তরু।
ঔষধি গুণ
১। অনেকের খাওয়াটা একটু এদিক-ওদিক হলেই পেটে নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়। এক্ষেত্রে এক চা চামচ পলাশ পাতার রস ৭/৮ চা চামচ পানি মিশিয়ে সকাল বিকাল দুইবার খেলে অবস্থা ভালো হয়ে যায়।
২। ফিতা বা সুতাকৃমির উপদ্রবে এক চামচ ছালের রসের সাথে আধা কাপ পানি মিশিয়ে অথবা এক গ্রাম বীজ গুঁড়া পানিসহ প্রতিদিন সকালে খেলে যে কোনো কৃমির উপদ্রব কমে যাবে।
৩। শুক্র তারল্যে পলাশের গদ ঘিয়ে ভেজে গুঁড়া করে এক গ্রাম সকাল-বিকাল ৩/৪ সপ্তাহ একনাগাড়ে খেলে অসুবিধা নিশ্চয়ই দূর হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে এক চামচ ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খেতে হবে।
৪। অনেকের বারবার প্রস্রাবে যেতে হয়, আয়ুর্বেদশাস্ত্রে একে বলে সোম রোগ। এক্ষেত্রে পলাশ পাতার এক চামচ রস ৭/৮ চামচ পানি মিশিয়ে সকাল-বিকাল খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৫। অনেকে রাতে ঘুমের মধ্যে খুব ঘামেন। আয়ুর্বেদশাস্ত্র মতে শুক্রবহ স্রোত দূষিত হয়ে শুক্র তারল্য ও তার ক্ষয় হয়ে যাওয়াতে এটা আসে। পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে নাড়ি প্রদাহ হতেই এটা হয়। আর এটা আসে ঘুমন্ত অবস্থায়। এ ক্ষেত্রে ২ চামচ পলাশ পাতার গরম রস ৭/৮ চামচ পানির সাথে মিশিয়ে সকাল-বিকাল দুইবার খেলে ৩/৪ দিনের মধ্যেই নিশা ঘর্ম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
৬। খাওয়াদাওয়া ভালো কিন্তু দেহের কান্তি বা লাবণ্য নেই, সেক্ষেত্রে তিনটি কচি পাতার রস ৭/৮ চামচ পানিতে মিশিয়ে খেলে রসবহ স্রোত পরিস্কার হযে ত্বকের স্বাভাবিক ক্রিয়া হতে থাকলেই দেহে লাবণ্য ফিরে আসবে।
৭। যে কোনো রকম বিছায় কামড়ালে পলাশ বীজ আকন্দের আঠার সাথে বেটে সেখানে লাগালে উপশম হয়।
৮। হাইড্রিল বা একশিরা হলে একাদশী, আমাবস্যা বা পূর্ণিমায় টনটন করে ব্যথা হয় আবার জ্বরও হয়, এক্ষেত্রে ৫০ গ্রাম পলাশ ফুল অল্প পানিতে সিদ্ধ করে হালকা গরম অবস্থায় ফুলাগুলিকে testis-এর চারধারে লাগিয়ে কয়েক ঘন্টা রেখে ছাড়িয়ে ফেলতে হবে। এভাবে ২/৩ দিন পর ২/১ বার লাগালে testis-এর কলেবরটি কমে যাবে।
অন্যান্য ব্যবহার
পলাশ কাঠ নিম্নমানের, তবে পানিতে বেশ টেকসই। ভালো কাঠকয়লা তৈরি হয়। গাছের প্রধান ব্যবহার লাক্ষা উৎপাদনে। পলাশ বাকল থেকে যে আঠা পাওয়া যায় তা বেঙ্গল কিনো নামে প্রসিদ্ধ। ফুলের পাপড়ি থেকে হলুদ রং পাওয়া যায়। তুঁতের সঙ্গে এ হলুদ রং মিশালে খাকি রং তৈরি হয়। পলাশ বীজের গুঁড়া কীটপতঙ্গ নাশক।
COMMENTS