নয়নতারা এর উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন বৈজ্ঞানিক নামঃ Catharanthus roseus (L.) G. Don.পরিবারঃ Apocynaceae.ইংরেজি নামঃ Perwinkle. পরিচিতি নয়নতারা...
নয়নতারা এর উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন
বৈজ্ঞানিক নামঃ Catharanthus roseus (L.) G. Don.পরিবারঃ Apocynaceae.ইংরেজি নামঃ Perwinkle.
পরিচিতি
নয়নতারা একটি বহু শাখা ও ঘন পাতাবিশিষ্ট গুল্ম। এটি ১ মিটার পর্যন্ত উুঁচ হতে পারে। শাখা বা ডালের পর্বসন্ধি হতে পারে একজোড়া করে পাতা বের হয়, পাতা বিপরীতমুখী, মসৃণ ও অনেকটা ডিম্বাকৃতি। বোঁটাসহ লম্বা ৫-৮ সে.মি. এবং চওড়া ২-৩.৫ সে.মি. পর্যন্ত হয়। পাতার উপরিভাগ গাঢ় সবুজ থাকলেও নিচের ভাগ হালকা বর্ণের। নয়নতারার শাখা শক্ত ও কাষ্ঠল। সারা বছরই ফুল ফোটে এবং ফলও ধরে। সাধারণত গোলাপি, হালকা গোলাপি ও সাদা এই তিন ধরনের নয়নতারা দেখো যায়। ২/৩ সে.মি. লম্বা পুষ্পদণ্ডে পাঁচ পাপড়িবিশিষ্ট ফুল ফোটে। পাপড়ি চারদিকে ছড়ানো থাকে, এর নিচের দিকে রং হালকা । পত্রকক্ষ হতে ৩/৪টি ফুল ফোটে। ফল দেখতে অবিকল সরিষার পড/শুঁটিরমতো, লম্বায় ২.৫/৩.৫ সে.মি.। এটি লম্বালম্ভিভাবে দুটি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত এবং প্রতি ফলে সরিষার আকারের ১৬-৩০টি পর্যন্ত বীজ থাকে। সমগ্র গাছেটি তিক্ত স্বাদের। এ গাছে প্রতিদিন ফুল ফোটে তাই এর এক নাম নিত্যবিলাস।
বিস্তৃতি
বাংলাদেশের সর্বত্র নয়নতারা জন্মায় । তবে ইফরোপ এর আদি নিবাস।
ঔষধি গুন
ভেষজ হিসেবে নয়নতারার পাতা ও মূল ব্যবহার হয়। সমগ্র গাছের রসে প্রায় ৭০টি উপক্ষার (Alkaloid) পাওয়া যায়। তার মধ্যে ভিনক্রিস্টিন নামক উপক্ষার দুটি লিউকেমিয়া রোগের ঔষধ হিসেবে বিশেষবাবে গণ্য। এটির ওপরে দেশে-বিদেশে বিজ্ঞানরিা এখনো ব্যপক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। নয়নতারার মধ্যে ডেলটা-ইহোহিম্বিন নামে যে রাসায়নিক পদার্থটি পাওয়া যায় সেটির চাহিদা বিশ্ববাজারে খুব বেশি।
১। নয়নতা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং sadatire হিসেবে কাজ করে (Ghani,2003)। উচ্চ রক্তচাপে (High Blood Pressure) মূলসহ নয়নতারার সমগ্র গাছ ও মূল শুকনো ১ গ্রাম, কাঁচা হলুদ ২ গ্রাম নিয়ে থেঁতো করে এক কাপ পানিতে সিদ্ধ করে সিকি কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে ঠাণ্ডা হলে অন্য কিছু খাওয়ার পরে ঐ ক্বাথ সকাল-বিকাল ২ বার ৮-১০ দিন খাওয়ার পর রক্তচাপ কমবে।তখন রক্তচাপ মেপে দেখে আরো ব্যবহারে সময় ও মাত্রা ঠিক করা দরকার
২। ডায়বেটিসে উপর্যুক্ত ক্বাথটি ৮/১০ দিন ব্যবহার করলে রক্তে চিনির পরিমাণ দ্রুত। পরে রক্ত পরীক্ষা করে চিনির মাত্রা দেখে ভেষজটির মাত্রা ঠিক করতে হবে।
৩। লিউকেমিয়া (Leukemia) একটি আসাধ্যের পর্যায়ভুক্ত গোগ। আয়ুর্বেদীয় মাস্ত্রমতে এটি রক্তস্রোতের ব্যাধি। এক্ষেত্রে নয়নতারা ভেষজটির ব্যবহার রোগটিকে প্রতিহত করতে সাহায্য করে। (inm,1956)
৪। কৃমি থেকে কুষ্ঠরোগ, হৃদরোগ, অরুচি, মূর্ছা, অজীর্ন, বারে বারে হাঁচি, সর্দি, পেট ফাঁপা, দাঁতের রোগ এমনকি মাথার রোগও হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ চিকিৎসক ভিন্ন ভিন্ন রোগের কারণ ভিন্ন ভিন্ন মনে করেন। এ অবস্থায় উপর্যুক্ত নয়নতারারক্বাথ ৫/৬ দিন সেবন করলে কৃমির উপদ্রব কমে গিয়ে অন্যান্য উপসর্গগুলিও উল্লেখযোগ্যবাবে কমে যায়। তারপর আরো ৮/১০ দিন ঐভাবে খেলে সম্পূর্ণ রেহাই পাওয়া যায়।
৫। মেধার গ্রহণ ও সঞ্চালন শক্তি ঠিক থাকলেও ধারণ শক্তি ক্রমশ কমে গেলে মেধার হ্রাস হয়েছে বলা হয়। এক্ষেত্রে নয়নতারার ক্বাথ নিয়মিত মাসখানেক খেলে খুব দ্রুত ফল পাওয়া যায়।
৬। কীট দংশনে বা বোলতা, ভিমরুল, মৌমাছি ও ভোমরার হুলের জ্বালা ও যন্ত্রণার হাত থেকে আশু উপকার পেতে হলে নয়নতারার পাতা থেঁতো করে সে রসটা লাগাতে হবে। (Ghani, 2003)
৭। নয়নতারায় ১০০টি alkaloid রয়েছে যা প্রাণ সংহারকারী ক্যান্সার চিকিৎসায়ও ব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। (Sim, 1956).
সমগ্র গাছ কুইন্সল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও শ্রীলংকায় ডায়রেটিস রোগে ব্যবহার হয়ে থাকে। এ ছাড়া এটি আবসাদক, স্নায়ু উত্তেজনা নাশক ও নিদ্রাকারক।
COMMENTS