আপাং এর উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন বৈজ্ঞানিক নামঃ Achyranthes aspera Linn. পরিবারঃ Amarthaceae ইংরেজি নামঃ Prickly Chaff-flower পরিচিতি আপাং এক...
আপাং এর উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন
বৈজ্ঞানিক নামঃ Achyranthes aspera Linn.
পরিবারঃ Amarthaceae
ইংরেজি নামঃ Prickly Chaff-flower
পরিচিতি
আপাং একটি ঊর্ধমুখী বর্ষজীবী উদ্ভিদ; এটি সাধারণত এক মিটারের বেশি উঁচু হয় না। শাখা-প্রশাখা চারদিকে ছড়িয়ে থাকে। পাতা বিপরীত দিকে বিন্যস্ত ও ডিম্বাকৃতি, লম্বায় ১২ সে.মি. চওড়া ৬ সে.মি. হয়। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল গাছের অগ্রভাগ থেকে ৫০-৮০ সে.মি. একটি লম্বা শীষ বা পুষ্পদণ্ড বের হয় এবং শীতেকালে চারদিকে ছোট ছোট সবুজের আভাযুক্ত ঊর্ধমূখী সাদা ফুল ফোটে। তবে কাঁটাযুক্ত ছোট ছোট ২৩০-২৫০টি ফল শীষের গায়ে নিম্নমুখী হয়ে জড়িয়ে থাকে। এগুলো সহজেই পোশাক-পরিচ্ছদ বা জীবজন্তুর গায়ে লেগে যায় এবং ছাড়তে চায় না। জীবজন্তুর গায়ে লেগে যায় বলে অনেক এলাকায় এটিকে বিলাই আঁচড় বলে। এখানে বিলাই অর্থ বিড়াল।
বিস্তৃতি
ভারত ও বাংলাদেশে আপাংয়ের আদিনিবাস। এই গণের প্রজাতির সংখ্যা ১২টি, তবে সাধারণত ৩-৪টি প্রজাতির বেশি দেখা যায় না
ঔষধি গুণ
১। সামান্য কারণে বা অল্প পরিশ্রমেই অনেকের বুক ধড়ফড় করে, শরীর চলে না; তখনই শুয়ে পড়তে হয়। এক্ষেত্রে শিকড়সহ আপাং গাছ ছেঁচে এক চা চামচ রস পানিসহ প্রতিদিন সকালে খেলে কয়েকদিনের মধ্যেই দুর্বলতা কেটে যাবে।
২। পরিপাকতন্ত্রের সমস্যার শেষ নেই। (ক) অনেকের খাওয়ার পরই আবার ক্ষুধা (রাক্ষুসে ক্ষুধা), আবার অনেকের না খেলেও ক্ষুধা নেই, খেলেও হজম হয় না। দু’টি দু’প্রান্তের সমস্যা। এ দু’টিরই সমাধান দিতে পারে আপাং। বীজের গুঁড়া ৩.৫ গ্রাম করে প্রত্যেক দিন দুই বেলা গরম পোনিসহ খেলে রাক্ষুসে ক্ষুধা থাকবে না । আবার গাছের শিকড় ৮ ভাগের ১ ভাগ গোলমরিচের সাথে বেটে গুঁড়া করে খেলে ক্ষুধা বাড়বে, হজমে সহায়ক হবে (Bhattacharia,1978)।
৩। অনেকে বলেন, টক খেতে পারি না; অনেকের ভাজপোড়া সহ্য হয় না, আবার অনেকের মিষ্টি। এমন অনেকে আছেন যাদের একটিও সহ্য হয় না। খেলে বমি বমি ভাব হয়। এ রকম হলে আপাংয়ের শিকড় ও পাতাসহ গাছ ছেঁচে রস ছেঁকে রেখে দিন এবং প্রতি ৩ ঘন্টা অন্তর ৩০/৪০ ফোঁটা করে ২/৩ দিন খাওয়ান। এতে ঐ অবস্থা কেটে যাবে।
৪। শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য বায়ু দরকারি হলেও পেটে বায়ু একটি অস্বস্তিকর অবস্থা। অনেকের খেলেও বায়ু না খেলেও বায়ু। ঢেকুরের ঠেলায় বাড়ির লোকজন অস্থির। আবার পায়খানাও পরিষ্কার হয় না যে এর থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। এ অবস্থায় আপাং গাছ শুকিয়ে আন্তর্ধূম পোড়ালে সাদা ছাই মেশানো কয়লা পাওয়া যাবে; এর থেকে ১-১.৫ গ্রাম করে নিয়ে অল্প গরম পানি মিশিয়ে খাওয়ার পর দিনে দু’বেলা খেলে কয়েক দিনের মধ্যে সেরে যাবে।
(টীকা : অন্তর্ধূম- আপাং গাছ শুকিয়ে মাটির হাঁড়ির মধ্যে মুখ বন্ধ করে আগুনে পোড়াতে হবে)
৫। স্বাস্থ্য সম্বন্ধে এখন সকলেই কমবেশি সচেতন। বিশেষ করে সৌন্দর্যসচেতন মহিলারা পেটে চর্বি জমা নিয়ে অস্বস্তিতে ভেগেন। তাদের জন্য সুসংবাদ হল- তাঁরা আপাং গাছ কলাপাতায় জড়িয়ে উপরে মাটি লেপে আগুনে ঝলসে তার ২ চা চামচ রস ৭/৮ চা চামচ পানি মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খাবেন। এতে এক মাসের মধ্যে পেটের চর্বি কমে যাবে। অবশ্য একই সাথে খাবার নিয়ন্ত্রণ করাও প্রয়োজন।
COMMENTS