ওল এর উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুণ বৈজ্ঞানিক নামঃ Amorphophallus Campanulatus Decne. পরিবারঃ Araceae. ইংরেজি নামঃ Elephant’s Foot/ Teliga Potato ...
ওল এর উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুণ
বৈজ্ঞানিক নামঃ Amorphophallus Campanulatus Decne.
পরিবারঃ Araceae.
ইংরেজি নামঃ Elephant’s Foot/ Teliga Potato
পরিচিতি
ওল শব্দটি প্রাক আর্য ভাষার ‘ওল্ল’ শব্দ থেকে এসেছে, যা অর্থ ‘বাহিরে সরল ভিতরে গরল’। ওল একটি বর্ষজীবী কন্দ উদ্ভব গুল্ম, সাধারণত এক মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। একটি কন্দ থেকে একাধিক সরল ও রসালো কাণ্ড বের হয়। সবুজ কাণ্ডের উপর সাদা ছোপ থাকে। প্রতি কাণ্ডের শীর্ষ থেকে পাতা ছাতার ন্যায় চারদিকে ছড়িয়ে থাকে। কাণ্ডর ন্যায় পাতা এবং পত্রদণ্ডও রসালো। ওলের কন্দ ৩০-৪০ সে. মি. ব্যাস পর্যন্ত হতে দেখাযায়, প্রধান কন্দের চারদিকে আবার ছোট ছোট গোলাকৃতি কন্দ জন্মে। ওলের রং হালকা গোলাপি থেকে সাদাটে বর্ণের হয়। ওল থেকে সাদা সাদা মোটা শিকড় বের হয়। ফুল উভয়লিঙ্গ, পুংকেশর অনেক। ফল ২২টি বীজবিশিষ্ট ও লাল বর্ণ।
বিস্তৃতি
সমগ্র এশিয়া ও আফ্রিকায় ওলের ২৫টি প্রজাতি আছে, এর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় ৭টি প্রজাতি পাওয়া যায়। একটি বুনো ওল আমাদের চোখে পড়ে যার কন্দের রং একটু লালচে এবং এ কন্দের কোষে Calcium Oxalate-এর গুচ্ছ থাকে, যা ওটা খাওয়ার সময় গলায় বিঁধে যায় ও চুলকায় এবং ফুলে যায়। তবে তেঁতুল বা লেবু খেলে এগুলি গলে যায়, এত ঐ অসুবিধা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের সর্বত্র বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ, যশোর ও পার্বত্য এলাকায় দুই টিলা বা পাহাড়ের মাঝের স্যঁতসেঁতে জায়গায় ভাল জন্ম।
ঔষধি গুণ
১। (ক) অর্শ রোগে কোষ্ঠকাঠিন্য হলে, কিডনি বা হার্টের দোষ না থাকলেও যদি পায়ে শোথ নামে
(খ) অর্শের রক্তস্রাব হলে
(গ) অর্শ থেকে গেঁটে বাত হলে
(ঘ) বাতের ব্যথায় ৭৫-১০০ গ্রাম এক টুকরা ওল খোসা ফেলে মাটি লেপে রোদে অল্প শুকিয়ে উনুনে ফেলে পোড়াতে হবে। এই ঝলসা পোড়া ওল থেঁতলে নিয়ে ঘি দিয়ে মেখে খেলে উপর্যুক্ত সমস্যার উপশম হবে।
২। সাবধানে থেকেও অনেকের সদি-কাশি লেগে থাকে, এক্ষেত্রে পিতা বা বাতার অর্শ থাকলে বুঝতে হবে রোগীর প্রত্যক্ষ অর্শ না থাকলেও রক্তে দোষাংশ প্রবহমান। এ অবস্তায় উপর্যুক্ত ওল পোড়ার সাথে নারিকেল কোরা ও ৫-৭ ফোঁটা ঘি মিশিয়ে খেলে সর্দির দোষটা কেটে যাবে।
৩। অনেকের খাদ্যদ্রব্য হজম হয় না, পেটে বায়ু থাকে, আবার দাস্ত পরিস্কার হয় না, অথচ মলের কঠিন্য থাকে না। এ অবস্থায় ৫০ গ্রাম ঝলসানো ওলের সাথে ঘোল মিশিয়ে খেলে উপকার হবে। প্রয়োজনে অল্প লবণ মিশানো যাবে ওলের সাথে।
৪। কারো কারো দিনে বারে বারে দাস্ত হয় কিন্ত রাতে তেমন হয় না, অর্থাৎ গ্রহনী রোগে ভোগে, এ ক্ষেত্রে ভাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন ভিজা ভাতের পানিতে ঝলসানো ওল মিশিয়ে খেলে ঐ সমস্যার উপশম হবে।
৫। মধ্যপানের নেশা ছেড়ে দিতে হচ্ছে হলে ঝলসানো ওলের রস মদে মিশিয়ে ২/৪ দিনে খেলে মাদকাসত্ততা আর থাকবে না।
৬। ছুলি ও দাদে ঘি মাখিয়ে পোড়া ওল ঘষলে ২/৩ দিনের মধ্যেই ছুলিতে ফল পাওয়া যাবে এবং দাদও তখনকার মতো সেরে যাবে।
৭। মৌমাছি, বোলতা, ভিমরুল ও ভোমরার হুলে এবং বিছার কামড়ে সাথে সাথে ঐ স্থানে ওলের ডাঁটা ঘষে লাগালে ৫/৭ মিনিটের মধ্যেই যন্ত্রণার আরাম হয়। ( Econ, Bot, 1970)
৮। হাজা অর্থাৎ গালে, মাথায় ফোসকা হরে ওলের ডাঁটার রস ওখানে লাগালে ২/৩ দিনেই আরাম বোধ হয়।
৯। এ ছাড়াও এটি তলপেটের ব্যথা, টিউমারের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। (Lloydia, 1967)
ছবি
COMMENTS