রসুন এর উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন বৈজ্ঞানিক নামঃ Allium Sativam Linnপরিবারঃ Lilliaceaeইংরেজি নামঃ Garlic পরিচিতি রসুন একটি কন্দাল বর্ষজীবী উদ...
রসুন এর উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন
বৈজ্ঞানিক নামঃ Allium Sativam Linnপরিবারঃ Lilliaceaeইংরেজি নামঃ Garlic
পরিচিতি
রসুন একটি কন্দাল বর্ষজীবী উদ্ভিদ। একাধিক কোয়া বা কন্দবিশিষ্ট সাদা শল্কপত্রাবৃত অংশটুকু মাটির নিচে থাকে এবং সবুজ পাতাসহ লম্বা পুষ্পদণ্ড (কলি) মাটির উপরে থাকে। রসুনের কথা মনে পড়তেই ধবধবে সাদা শল্কপত্র ও একগুচ্ছ মূলের ছবি ভেসে ওঠে। রসুন ও এর দুর্গন্ধের বিষয়ে অথর্ববেদ, সংহিতা ও প্রাচীন বিভিন্ন কাহিনীতে উল্লেখ আছে। পেঁয়াজের সাথ রসুনের তফাত হল যে, পোঁজ এক কন্দাল এবং শল্কপত্র লাল। রসুনের একাধিক কন্দ একসঙ্গে গুচ্ছমূলের সাথ যুক্ত থাকে। এ ছাড়া রসুনের কলি পেঁয়াজের কলি অপের্ক্ষা ছোট এবং সরু।
বিস্তৃতি
বাংলাদেশ, ভারত ও সংলগ্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল এমনকি পৃথিবীর অন্যান্য মহাদেশেও এর চাষ করা হয়। বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকাতেই এর চাষ হয়।
ঔষধি গুণ
রসুনের ঔষধি গুণ সম্বন্ধে পাশ্চাত্র চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক Hippocrates লিখেছেন যে, আমাদের বনেষৈধির মধ্যে রোগ প্রতিকারে রসুনের স্থানই প্রথম। ছয়টি রসের মধ্যে রসুনে পাঁচটি আছে বলে এর নাম হয়েছে- রস+ঊন (কম)= রসুন। কন্দে কটু, পাতায় তিক্ত, পুষ্পনালে (কলি) কষায়, তার আগায় লবণ এবং বীজে মধুর রস রয়েছে। যেটি নেই সেটি অম্ল রস। প্রমাণ করা যায় এভাবে যে দুধে রসুন দিলে দুধ কাটে না। উল্লেখ্য যে, ঔষধার্থে ও আহার্য হিসেবে রসুনের কন্দ থেকে বীজ পর্যন্ত সকল অংশই ব্যবহার করা হয় এবং এর প্রতিটি অংশই পৃথক পৃথক গুণের অধিকারী। এ ছাড়াও রসুনে ভিটামিন এ, বি, সি ও ডি আছে।
আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য বলেছেন, রসুন সূক্ষ্মাস্রোতগামী তাই পারদের মতো সর্বশরীরে ব্যাপ্ত হতে পারে বলেই গায়ে গন্ধ বের হয়। এটি মেধা, স্মৃতি, বল ও আয়ুবর্ধক। পুরুষের পক্ষে শুক্র ও ওজোধাতুর বর্ধক, পৌরুষ প্রবৃত্তির ধারক ও বাহক। নারীর পক্ষে সন্তানপ্রদ ও আয়ুষ্কর। যুবতীর অঙ্গসৌষ্ঠবের সমতা রক্ষক এবং কিশোরের পক্ষে শরীর ও মানের সার্বিক উন্নতিকর।
রসুনের মধ্যে allyl sulphide থাকায় এটি কন্দটির সর্বপ্রকার জীবাণু নাশ কেরার শক্তি আছ। একটা রসুন থেঁতো করে ঘরে রেখে দিলে ঘর জীবাণুমুক্ত থাকে।
বেশ আগে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় রসুনের ওপর এক সেমিনার হয়েছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রসুনের ওপর যে গবেষণা হয়েছে তা উপস্থাপিত হয় সেখানে। জার্মানিতে ৮০ জন Blood pressure- এর রোগীকে রসন দেওয়া হয়; তাদের প্রায় সকলেই উক্ত রোগের উপকার পেয়েছেন। জাপানে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে রসুনে বি-কোলাই ও টাইফয়েডের জীবাণু নাশ করার শক্তি আছে
ব্রাজিলের একদল চিকিৎসক রসুন প্রয়োগ করেছেন Amebic dysentery, Typhoid ও paratyphoid রোগের ক্ষেত্রে।
রাশিয়ার চিকিৎসকগণ বরেছেন রসুনের দ্রব্যশক্তি পেনিসিলিনের তুল্য।
অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা কেন্দ্র গাতক ব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধ ও শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে রসুনের কার্যকারিতার কথা উল্লেখ করেছে।
১৯২৯ সালে জার্মানির বিজ্ঞানীরা একমত প্রকাশ করেন যে, রক্ত পরিষ্কার ও নতুন রক্তকণিকা প্রস্তুতে রসুনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
১। ক) স্বল্প মেধায় খ) বিষ্মরণে গ) কৃমিতে ঘ) রাতকানায় ঙ) শুক্র তারলল্যে চ) খাথুরি রোগে ছ) জীর্ণ জ্বরে ও জ) শরীরের জড়তা ইত্যাদ ক্ষেত্রে দুই বা এক কোয়া রসুন চিচিয়ে খেয়ে একটু গরম দুধ খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
২। যখন পুরোনো জ্বর ছাড়ে না, বাড়ে বা কমে কিন্তু একটু থেকেই যায়, তখন ৫/৭ ফোঁটা রসুনের রসের সাথে আধা কাপ গাওয়া ঘি মিশিয়ে খেলে ২/৪ দিনের মধ্যেই জ্বর কমে যায়।
৩। অল্প গরম দুধের সাথে ২/১ কোয়া রসুন বাট খেলে শুক্র তারতল্য হয় না। শরীরের নত্যি ক্ষয় রোধ হয় ও অস্থির বল বাড়ে।
৪। রসুনের essential oil পেটের বায়ুনাশক হিসেবে কাজ করে ও হজমশক্তি বাড়ায় (Ghani, 2002); তাই পেটের বায়ুতে ঠাণ্ডা পানিতে ২/১ ফোঁটা রসুনের রস মিশিয়ে খেলে অনেক ক্ষেত্রে উদ্বেগ চলে যায়।
৫। সরিষার তেলে রসুন ভেজে সেই তেল মালিশ করলে বাতের যন্ত্রণা কমে যায়।
৬। সর্দি হয় না অথচ মাথা ধরে, এরকম হলে ২/১ ফোঁটা রসুনের রসের নস্যি নিলে উপকার পাওয়া যায়।
৭। রসুনে যে Allicin রয়েছে তা ছত্রাক এ জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে (Said, 1996)। ক্ষতের ক্লেদ/পচা অংশ কিছুতেই যেতে চায় না, এরুপ হলে রসুন বাট ক্ষতে লাগারে কেটে যাবে। গরু-মহিষের ক্ষতের পোকা পড়লেও এত সেরে যায়। তা ছাড়া ক্ষতও শুকিয়ে যায়।
৮।রক্তের কোলেষ্টরলের মাত্রা কমাতেও রসুনের ভূমিকা কার্যকরী। (Chevallier, 1996)
৯। বাংলাদেশ ন্যশনাল হার্বেরিয়ামের এক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার মতে রসুনের রস নারকেল বা সরিষা বা তিল তেলের সাথে মিশিয়ে নিয়মিত মাথায় ব্যবহার করলে চুল চাকা বন্ধ হয়। রসওন বেটে মাথায় প্রলেপ দিলে চাক পড়া বন্ধ হয়।
১০। আমাশয় হলে সকাল -বিকাল এক কোয়া কাঁচা রসন চিবিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
১১। রসুনে চর ধরনের Saponin রয়েছে (peng et al, 1996), যা যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী হরমোনকে উজ্জীবিত করে, নিঃসরণ বাড়ায় (Ghani 2002) । চরক ও সুশ্রুত সংহিতায় উল্লেখ আছে রসুন যৌবন রক্ষায় এমনকি ঢলে পড়া যৌবনে বিশেষ কার্যকরী। উক্ত মতে কাঁচা আমলকীর ২/১ চা চামচ রসের সাথে ১/২ কোয়া রসুন বাট খেলে যৌবন দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং গাওয়া ঘিয়ে রসুনের কোয়ো ভেজে মাখন লাগিয়ে নিয়মিত খেলে ঢলে পড়া যৌবন রক্ষা হবে। এটি খাওয়ার পরে গরম পানি খাওয়া উত্তম
১২। ভেষজবিজ্ঞানী ড. আব্দুল গণি লিখেছেন রসুন ডায়বেটিস রোগের কার্যকরী ওষুধ। এছাড়াও এটি উদ্দীপক, কৃমিনাশক, Hypoglycaemic ও মূত্রবর্ধক হিসেবে ফলপ্রসূ। রসুনের রস বায়ুনাশক, কাশি বহিষ্কারক, তলপেটের ব্যথা নিবারক।
রসুনের এত গুণ হওয়া সত্তেও এর তীব্র গন্ধের জন্য অনেকে খেতে চান না। এ ক্ষেত্রে রসুনের কোয়ার উপরের খোসা ছাড়িয়ে আধখানা করে কেটে আগের দিন রাতে টক দইয়ে ভিজিয়ে রেখে পরদিন খেলে গন্ধ থাকে না। এ ছাড়া আধা রসুনের কোয়া ঘিয়ে ভেজে নিলেও গন্ধ থাকে না।
অন্যান্য ব্যবহার
রসুনের কন্দ, কলি, পাতা ইত্রাদি সবজি হিসেবে ব্যবহার হয়।
COMMENTS