নিম গাছের গুনাগুন ও উপকারীতা

নিম গাছের গুনাগুন ও উপকারীতা পরিচিতি নিম মাঝারি ধরনের সুদর্শন চিরহরিৎ বৃক্ষ। তবে শুষ্ক জায়গায় পত্রঝরা কৃক্ষের ন্যায় আচরণ করে। গাছ সাধারণত ১২...

নিম গাছের গুনাগুন ও উপকারীতা

পরিচিতি

নিম মাঝারি ধরনের সুদর্শন চিরহরিৎ বৃক্ষ। তবে শুষ্ক জায়গায় পত্রঝরা কৃক্ষের ন্যায় আচরণ করে। গাছ সাধারণত ১২-১৫ সে.মি. পর্যন্ত হয়। গাছ বা মোটা ডালের বাকলের রং গাঢ় ও অমসৃণ হলেও অপেক্ষাকৃত কচি ডালের রং খয়েরি।গাছের বাকল অপেক্ষাকৃত মোটা। ডালের চারদিকে উপর-নিচ করে ৩০ থেকে ৩৫ সে.মি. লম্বা যৌগিক পত্র জন্মে। প্রতিটি পাতা বিশিষ্ট ভঙ্গিতে কাস্তের মত বাঁকানো এবং পাতায় ১০ থেকে ১৭ টি করে কিনারা খাঁজকাটা পত্রক থাকে। প্রতিটি পত্রক ৬-৮ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতায় জোড় এবং বিজোড় সংখ্যক পত্রক উভয়ই থাকতে পারে। ৪৫০-১,১৫০ মি.মি. বৃষ্টিপাত নিম গাছের জন্য উত্তম।

ঔষধি গুণ

নিম তো গুণী গাছ। নিমের বিবিধ ঔষধি গুণের কথা কমবেশি সবাই জানেন। নিম গাছের ফুল, ফল, পাতা, বাকল ও শিকড় সবই  ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

১। (ক) নিমের বিভিন্ন অংশে ট্যানিন ও bitter priciples আছে। নিমের প্রধান ব্যবহার চর্ম রোগে ও বীর্যনাশক হিসেবে। চুলকানি বা খোসপাঁচড়া হলে নিমের পাতা বা বাকল বেটে পরপর ৩/৪ দিন গায়ে মেখে দুই ঘন্টা পর গোসল করে ফেললে সেরে যায়।

২। যে কোনো প্রকার কৃমির উপদ্রবেও নিম পাতার বড়ি বা পাতার গুঁড়া খুবই কার্যকরী। ওষুধ হিসেবে খাওয়া ছাড়াও মাঝে মাঝে নিমের বড়ি বা পাতা গুঁড়া খেলে তা ঐ সকল রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

৩। শ্বাসকষ্ট এবং দুর্বলতায় নিম ফুল উপকারী। এ ছাড়া বাতজ্বরে নিম তেল ব্যবহার সারা পৃথিবীতেই স্বীকৃত। নিম বীজের গুঁড়াও নিম তেলের ন্যায় কার্যকরী, তবে বীজের গুঁড়াপানি ও অন্য তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হয়।

৪। পোকামাকড় দমনেও নিমের ব্যবহার রয়েছে। শুকনো নিম পাতা ধান, চালের গোলায় বা ডাল গমের পাত্রে রাখলে এসব খাদ্যশস্য পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। বর্ষাকালে আলমারিতে রাখা কাপড়চোপড়ে বাজে গন্ধ হয়। তা ছাড়া এসব কাপড়চোপড় অনেক সময় পোকায় কেটে নষ্ট করে। এ সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আলমারির এক কোণে কিছু শুকনা নিম পাতা ঝুলিয়ে রাখা যায়।

৫। নিম পাতা বেটে পানিতে মিশিয়ে পোকা আক্রান্ত ক্ষেতে প্রয়োগ করলে উপকার পাওয়া যায়।

৬। মুখে অরুচি হলে সুজির হালুয়ার সাথে অল্প নিম পাতা গুঁড়া মিশিয়ে কয়েকদিন খেলে মুখে রুচি ফিরে আসে।

৭। চাপা অম্লরোগে সকালে খালি পেটে ৪/৫ গ্রাম নিম পাতা গুঁড়া কয়েকদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।

৮। নিম পাতা গুঁড়া এক ভাগ, কাঁচা হলুদ শুকিয়ে গুঁড়া করে দুই ভাগ এবং শুকনো আমলকী গুঁড়া তিন ভাগ একসঙ্গে মিশিয়ে তার এক গ্রাম প্রতিদিন সকালে খেলে এলার্জি সেরে যায়।

৯। ঘুষঘুষে জ্বর হলে ২৫০ মি. গ্রাম নিম পাতা গুঁড়া ১৫০ মি. গ্রাম মকরধ্বজসহ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কমে যায়।

১০। পিত্ত বিকারে যদি দাঁতের মাঢ়ীতে ঘায়ের সৃষ্টি হয়, তা হলে নিমের বিচির তেল লাগালে কমে যায়।

১১। নিম পাতা বেটে ফোড়ায় প্রলেপ দিলে তা পেকে যায়।

১২। রাতকানা রোগে নিমের ফুল ভাজা খেলে রাতকানা রোগ ভাল হয়।

১৩। অকাল চোখে পিচুটি পড়া, ঝাপসা দেখা বা চোখ জুড়ে যাওয়াতে নিম পাতার ৫/৭ফোঁটা রস দুধ ও পানির সাথে মিশিয়ে খেতে হবে।

১৪। বসন্তকালে নিম-বেগুন বাঙালির একটি প্রিয় ব্যঞ্জন। এতে  একদিকে যেমন খাবার রুচিবাড়ে, অন্যদিকে এতে অন্যান্য শাকের চেয়ে অনেক বেশি আয়রন থাকে।

১৫। শিশুর কেশ দাদে নিম দানার তেল লাগালে কমে যায়।

১৬।নিম পাতা সিদ্ধ পানি দিয়ে গোসল করলে শরীর সতেজ থাকে ও অনেক চর্মরোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

এ ছাড়া নিম গাছ বহুমূত্র, কাশি, কুষ্ঠ, পিত্ত ও যকৃতের রোগ নিবারণে ব্যবহার করা হয়। নিম পাতা ঘরে রাখলে মশার উপদ্রব কমে। নিমপতার গুঁড়া ও ডাল ‍উৎকৃষ্ট প্রাচীন শাস্ত্রকারদের মতে নিম গাছের ছায়া এবং বাতাস স্বাস্থ্যকর। এ কারণে বাসগৃহ ও হাসপাতালের সামনে নিম গাছ লাগানো হয়। নিম গাছের তৈরি খাটে ঘুমালে নীরোগ জীবন লাভ করা যায় বলে অনেকের ধারণা।

অন্যান্য ব্যবহার

নিম কাঠ ঘুণে ধরে না বলে গরুর গাড়ির চাকা, কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। বীজ থেকে আহরিত মারগোসা তেল প্রসাধন দ্রব্য ও পোকা বিদূরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তেলের খৈল সার হিসেবেব্যবহৃত হয়। দানাদার শস্য ও কাপড়চোপড় পোকামাকড়ের ‍উপদ্রব থেকে রক্ষা করার জন্য শুকনো পাতা ব্যবহার করা হয়।

COMMENTS

Name

Uncategorized,1,অচেতন/মূর্ছা,2,অড়হর,1,অনন্তমূল,1,অপরাজিতা,1,অর্জুন,1,অশোক,1,অশ্বগন্ধা,1,অশ্বথ,1,আকন্দ,1,আখ,1,আগর,1,আদা,2,আনারস,1,আপাং,1,আম গাছ,1,আমড়া,1,আমরুল,2,আমলকী,1,আরোহী,8,আঁশফল,1,আশশেওড়া,1,আসাম লতা,1,উলট চণ্ডাল,1,উলটকম্বল,1,এলাচি,1,ওজন কমানো,23,ওল,1,কতবেল,1,কদম,1,কন্টিকারি,1,করমচা,1,করলা,1,করোনাভাইরাস,2,কলমি শাক,1,কলা,1,কাজুবাদাম,1,কাঁটানটে,1,কাঁঠাল,1,কামরাঙ্গা,1,কালমেঘ,1,কালোজাম,1,কালোজিরা,1,কুঁচ,1,কুরচি,1,কুল,1,কেও / তারা,1,কেয়া,1,খেজুর,1,গনিয়ারি,1,গন্ধবাদালি,1,গাজর,1,গাঁদা,1,গাব,1,গামার,1,গিমে শাক,1,গুলঞ্চ লতা,1,গুল্ম,30,গোড়ানিম,1,গোলমরিচ,1,গোলাপ,1,ঘৃতকুমারী,1,চালকুমড়া,1,চালতা,1,চালমুগরা,1,চিচিঙ্গা,1,ছাতিম,1,জবা,1,ডালিম,1,তাল,1,তুলসী,1,তৃন-লতা,16,তেজপাতা,1,তেঁতুল,1,তেলাকুচা,1,থানকুনি পাতা,1,দারুচিনি,1,দূর্বা ঘাস,1,ধুতরা,1,নয়নতারা,1,নাগেশ্বর,1,নারিকেল,1,নিম,1,নিশিন্দা,1,পলাশ,1,পাথরকুচি,1,পিত্তরাজ,1,পিপুল,1,পুঁইশাক,1,পুনর্নবা,1,পেটারি,1,পেঁপে,1,পেঁয়াজ,1,পেয়ারা,1,ফল,1,বকুল,1,বচ,1,বট বৃক্ষ,1,বরুণ,1,বহেড়া,1,বাতাবি লেবু,1,বাসক,1,বীরুৎ,8,বৃক্ষ,50,বেল,1,বেসন,1,ভাইরাস,2,ভৃঙ্গরাজ,1,মহুয়া,1,মান্দার,1,মেহেদি,1,যজ্ঞডুমুর,1,রক্তকাঞ্চন,1,রসুন,1,রিঠা,1,লজ্জাবতী,1,লবঙ্গ,1,শাল গাছ,1,শিমুল,1,শেওড়া গাছ,1,শ্বেত চন্দন,1,শ্বেত শিমুল,1,সর্পগন্ধা,1,সাজনা,1,সুপারি,1,সোনালু,1,হরীতকী,1,হলুদ,1,হাড়জোড়া,1,হার্বাল টিপস,27,হেলেঞ্চা,1,
ltr
item
Herbal Forest BD: নিম গাছের গুনাগুন ও উপকারীতা
নিম গাছের গুনাগুন ও উপকারীতা
Herbal Forest BD
https://herbalforestbd.blogspot.com/2018/11/blog-post_99.html
https://herbalforestbd.blogspot.com/
https://herbalforestbd.blogspot.com/
https://herbalforestbd.blogspot.com/2018/11/blog-post_99.html
true
3334514751400476641
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy Table of Content